• Latest News

    November 12, 2011

    ভারতজয়ে স্পিলবার্গের টিনটিন

    ছোটো থেকে বড়, ফ্যান সবাই। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা টিনটিন এ বার সেলুলয়েডের পর্দায়। ভারতের পর্দায় অ্যাডভেঞ্চার করতে এ বার এসে পড়ল টিনটিন আর তাঁর ফক্স টেরিয়র, স্নোয়ি। নাম দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ টিনটিন। পরিচালক, স্টিভেন স্পিলবার্গ। একশো সত্তর মিনিটের ছবিটিতে অভিনয় করেছেন জেমি বেল, অ্যান্ডি সরকিস এবং ড্যানিয়্যাল ক্রেগ।
    ঊনিশশো উনত্রিশে টিনটিনের প্রথম আবির্ভাব। সৃষ্টিকর্তা বেলজিয়ান কার্টুনিস্ট জর্জ রেমি। আবির্ভাবের পরই ভিনি ভিডি ভিসি। এক লহমায় বিশ্বজয়। রিপোর্টার কাম তুখোড় গোয়েন্দা টিনটিনের দুঃসাহসিক নানা অভিযানে মজে গেল আট থেকে আশি। বাকিটা ইতিহাস। সেই টিনটিনকেই এবার সেলুলয়েডে আনলেন আর এক বিশ্ববিখ্যাত টিনটিন ভক্ত স্টিভেন স্পিলবার্গ। ক্র্যাব উইথ দ্য গোল্ডেন ক্লস, দ্য সিক্রেট অফ ইউনিকর্ণ আর রেড রেকহ্যাম্‌স ট্রেজার নিয়ে তৈরি হয়েছে এই ছবি।
    মাঝে সাজে পিস্তল বের করে ভয় দেখায় বটে। তবে মূলত টিনটিনের রহস্য সমাধানের হাতিয়ার মগজাস্ত্র। টিনটিনের সঙ্গে এই ছবিতে যথারীতি রয়েছেন ক্যাপ্টেন হ্যাডক। সঙ্গে প্রফেসর ক্যালকুলাস। ইটি, জুরাসিক পার্ক, ইন্ডিয়ানা জোন্স এর মতো ছবির বিখ্যাত পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ টিনটিনকে পর্দায় আনতে ব্যবহার করেছেন অ্যানিমেশন। রয়েছে থ্রিডি প্রযুক্তির ছোঁয়া। ছবি তৈরি হয়েছে স্টুডিওতেই। ছবিতে টিনটিনের গন্তব্য ইউরোপের একটি শহর। সেখানে সে তিন মাস্তুলওয়ালা একটি দামি জাহাজ কেনে। দুজন লোক আবার সেই ছোট্ট জাহাজটিই কিনতে চায়। কেন। কী রহস্য লুকিয়ে আছে ওই জাহাজের মডেলে। সেই রহস্যই মুন্সিয়ানার সঙ্গে খোলসা করেছেন স্পিলবার্গ এই ছবিতে।
    তবে এই প্রথম নয়। ঊনিশশো সাতচল্লিশ সালে টিনটিনকে নিয়ে তৈরি হওয়া দ্যা ক্র্যাব উইথ দ্যা গোল্ডেন ক্লজ নামে একটি ছবি মুক্তি পায়। তারপর উনিশশো সাতচল্লিশ সালে আরেকটি ছবি মুক্তি পায়। তারপর বহু বছর বাদে আবার টিনটিন জাদু বড়পর্দায়। বেলজিয়াম থেকে ভারত, টিনটিনের জনপ্রিয়তা পৃথিবীর সর্বত্র। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে আনন্দমেলার হাত ধরে প্রথম ভারতে পা দেয় টিনটিন। বাংলা ভাষায় টিনটিনের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। পরপর তেইশটি বই বের করা হয়। এরপর জনপ্রিয়তা ও চাহিদাকে মাথায় রেখে হিন্দিতেও ধরা দিল টিনটিন। সম্রাট ওট্টোকার কা রাডদন্ড, নীল কমল, টুটা হুয়া কান, কালাদ্বীপ, মিশর সম্রাট কে সিগার ইত্যাদি একের পর এক হিন্দি ভার্সান বাজারে আসে।
    শুধুমাত্র বই বা বড় পর্দাতেই আবদ্ধ নয় টিনটিন। প্রথমবার টেলিভিশনে আত্মপ্রকাশ করে জর্জ রেমির অ্যাডভেঞ্চার অফ টিনটিন। পাঁচটি এপিসোডে সিরিজটি ঊনিশশো আটান্ন সাল থেকে ঊনিশশো বাষট্টি সাল পর্যন্ত চলে টেলিভিশনে। ঊনিশশো একানব্বই থেকে বিরানব্বই সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় সিরিজটি পুনরায় টেলিভিশনে দেখা যায়। দ্বিতীয় সিরিজটিতে ছিল ট্র্যাডিশনাল অ্যানিমেশনের ছোঁয়া।
    উচ্চতা খুব বেশি নয়। গড়পড়তা ইউরোপিয়র তুলনায় বেঁটেই বলা যায়। বয়সও কম। সেই নাতি দীর্ঘ তরুণই দুঁদে রিপোর্টার। অন্তত প্রথম আলাপের সময় জর্জ রেমি ওরফে হার্জ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ফরাসি কাগজে আদতে বেলজিয়ান এই সাংবাদিক রিপোর্টারদের মধ্যে প্রথম সারিতেই রয়েছেন। তাঁর চেহারাতেও একটা বিশেষত্ব রয়েছে। মাথার সামনের চুলটা চূড়োর মতো উঁচু হয়ে তাকে। এই তরুণের নামই টিনটিন। টিনটিনের সর্বক্ষণের সঙ্গী একটি ফক্স টেরিয়ার কুকুর। নাম স্নোয়ি। প্রভু অন্ত প্রাণ। তবে আস্ত একটা হাড় দেখতে পেলে প্রভুর নির্দেশ আর মাথায় থাকে না তার। এই ভাবে হাড়ের পিছনে ছুটে কতবার যে বিভ্রাটে পড়েছে তার ইয়ত্তা নেই। মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলে হুইস্কি চেখে দেখতেও আপত্তি নেই স্নোয়ির। নেশা করে তার সেই বেসামাল অবস্থা কয়েকবার বিব্রত করেছিল টিনটিনকেও। টিনটিনের অভিন্ন হৃদয় বন্ধু ক্যাপ্টেন আর্চিবল্ড হ্যাডক। সংক্ষেপে ক্যাপ্টেন হ্যাডক। জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন। অবসর নিয়েছেন। তবে সমুদ্র যাত্রার প্রস্তাব এলে সবসময় রাজি। বদ অভ্যাস বলতে একটাই। হুইস্কির প্রতি একটু বেশিই আসক্ত। মাত্রাজ্ঞানটা মাঝে মাঝেই খেয়াল থাকে না। তখন একটু বাড়াবাড়ি। ওই যা হয় আর কী। তা সেরকম অবস্থায় পরে সম্বিত ফিরলে লজ্জিতও কী হন না। নিশ্চই হন। বিশেষ করে ক্যাপ্টেন হ্যাডক আবার যখন সোবার সেলারস সমিতির মাথা। তখন প্রতিজ্ঞাও করে বসেন, আর কখনও নয়। কিন্তু ওই। পরে আবার হুইস্কির বোতল দেখলেই কী যে হয়। এই উদার হৃদয় অথচ কখনও সখনও কিঞ্চিত বেসামাল বন্ধু ক্যাপ্টেন হ্যাডককে নিয়েই টিনটিন বেশিরভাগ সময় বেরিয়ে পড়ে অভিযানে। সে হ্যাডকের পূর্বপুরুষ রেড রেকহ্যাম্‌স এর গুপ্তধনের সন্ধানই হোক বা চাঁদে মাটিতে পা রাখার দুঃসাহসিক ঘটনাই হোক। আরও এক সঙ্গী রয়েছে টিনটিনের। নাম ক্যাথবার্ট ক্যালকুলাস। বিখ্যাত বিজ্ঞানী। কত যে আবিষ্কার রয়েছে তাঁর। এমনকী পরমাণু প্রযুক্তিও তাঁর নখদর্পণে। কানে একটু খাটো। তাই ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কমিউনিকেশনটা সব সময় টিকঠাক হয় না। তা বলে কেউ যদি অকথা কুকথা বলে, সেটা ঠিক শুনতে পান। তখন একেবারে রেগে কাঁই। ক্যালকুলাস রেগে গেলে তাকে একমাত্র শান্ত করতে পারে টিনটিন। আপনভোলা এই বিজ্ঞানী মাঝে মধ্যেই হাতের পেন্ডুলাম দুলিয়ে কোথায় যে উধাও হয়ে য়ান। পেন্ডুলাম অবশ্য বেশিরভাগ সময় যে দিকনির্দেশ করে সেখানে গিয়ে কিছু মেলে না। ধুরন্ধর এক সাংবাদিক কাম গোয়েন্দা। আর স্নোয়িকে নিয়ে তার বিচিত্র তিন সঙ্গী। এদের নিয়েই তো টিনটিনের তাকলাগানো নানা কাণ্ডকারখানা।
    • Blogger Comments
    • Facebook Comments

    0 comments:

    Post a Comment

    Item Reviewed: ভারতজয়ে স্পিলবার্গের টিনটিন Rating: 5 Reviewed By: Kaustav Basu
    Scroll to Top